দেবব্রত জোন+গীত — বাংলা Transcript

Triangular Vishon
15 min readApr 4, 2021
আমরা যেগুলো নিয়ে কথা বলেছি সেগুলো এখানে পেয়ে যাবে।

একদম প্রথম কোন গানটা শিখেছিস মনে আছে?

হ্যাঁ, মনে আছে। যে গানটা প্রথম শিখেছিলাম সেটা রবীন্দ্রনাথেরই গান ছিল।

আমি অবশ্য শিখিনি কিন্তু যে কোনো বাঙালি বাচ্চার মত করেই খুব সামান্য কিছু জিনিসগুলোর মধ্যে দিয়েই কিন্তু আমি রবীন্দ্রসঙ্গীতটাকে পেয়েছিলাম। যেমন ধর, আগে যখন অন্তাক্ষরি খেলা হত। তখন যার প্রথম দান পড়বে, সে কিন্তু ‘ম’ দিয়ে ‘মম চিত্তে, নিতি নৃত্যে’- এটাই গাইবে। সেটাই নিয়ম। তাকে অন্য কিছু ভাবতেই হবে না। কিন্তু পরে যখন আমি একটু বড় হলাম এবং শোনার জন্য শুনছি রবীন্দ্রসঙ্গীত, তখন আমি realize করছি যে, মোটামুটি সব রবীন্দ্রসঙ্গীতই কোনো না কোনো জায়গায় গিয়ে সেই ঝিমিয়ে পড়ে। এবার confusion-টা কোথায়? আমি চারপাশের লোকজনকে দেখছি, তারা কিন্তু প্রচুর পরিমানে রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনছে। তাদের দারুন লাগছে। কিন্তু confusion-টা আবার এইখানেই যে আমার ভালো লাগছে না! Natural প্রশ্ন — তাহলে কি সমস্যাটা আমারই? আমিই মানে বুঝতে পারছি না, তাই আমি appreciate করতে পারছি না?

বুঝেছি! আসলে আমার এরকম সমস্যা হয়নি। কারণ সত্যি বলতে কি, ওই সময়ে রবীন্দ্রনাথের গানের মানে বোঝার আমি চেষ্টাই করিনি। আমাকে শেখানো হত, আমি গাইতাম। হ্যাঁ, শেখানোর সময় এটা বোঝানো হয়েছিল যে রবীন্দ্রনাথের গান আর পাঁচটা গানের মত কিন্তু নয়। মানে একটা special ব্যাপার, একটা বড়সড় জিনিস। এটা ঠিক। আমার ছোটবেলার কথা মনে আছে। একবার আমার জ্যাঠা আমার বাড়িতে একটা রবীন্দ্রনাথের গানের cassette এনেছে। Tape recorder-এ বাজানো হবে। তার আগে এটা বলে দিয়েছে যে এই গানগুলো যিনি গেয়েছেন, খুব নামী শিল্পী। দেবব্রত বিশ্বাস তার নাম। এবার গান চলছে। আমি শুনছি। এবার আমারও তো রবীন্দ্রনাথের গান শোনা আছে তার আগে। মানে কী রকম হয় রবীন্দ্রনাথের গান, তার একটা ধারণা আছে। কিন্তু ওই যে গানগুলো, ওগুলো কিন্তু আমার খুব আলাদা রকম লাগছে। সত্যি বলতে কি, আমার খুব একটা ভালোও লাগেনি তখন। তার বেশ কিছু সময় পরে, আমি তখন 8/9-এ পড়ি, এরকম সময়ে, বাড়িতে দূরদর্শনে একটা বাংলা cinema চলছিল। আমি cinema-টা খুব একটা মন দিয়ে দেখছিলামও না। কিন্তু ওই cinema-তেই একটা গানের sequence ছিল। গানটা ছিল, ‘যে রাতে মোর দুয়ারগুলি ভাঙল ঝড়ে’। এবার তখনই, ওই সময়েই, আমার দারুন লেগেছিল গানটা ওই cinema-তে। এবার আমি একটু পরে খোঁজ নিচ্ছি যে ওই cinema-তে ওই গানটা কে গেয়েছে? পরে জানতে পারছি সেই দেবব্রত বিশ্বাসেরই গাওয়া ওই গানটা!

এটা একটা coincidence। তার কারণ আমি স্কুলে না দেখলেও, কলেজে গিয়ে cinema-টা যখন দেখেছিলাম, তখন exactly এই sequence-টাই কিন্তু আমার দারুন লেগেছিল। তবে এটাও ঠিক যে এই যে এত ভালো লেগেছে, সেটা কিন্তু শুধু দেবব্রত বিশ্বাস গানটা গেয়েছে বলে নয়। আমার মনে হয় যে পুরো ব্যাপারটা একটা অসাধারণ কিছু ছিল।

হ্যাঁ, ঠিক! কেন? এটা আমি বলতে পারিস অনেক পরে গিয়ে realize করেছি। আসলে একটা combination-এর ব্যাপার আছে। এবং সেটা একটা ফাটাফাটি combination! কেন না, তুই যদি মনে করে দেখিস, ‘কোমল গান্ধার’ ছবিতে ‘আকাশ ভরা সূর্য তারা’ গানটায়, দেবব্রত বিশ্বাস গাইছে, ওই অনিল চ্যাটার্জি অভিনয় করছে। সেই পাহাড়ের ওপর খালি পায়ে গান গেয়ে গেয়ে বেড়াচ্ছে। এরকম একটা গান গাইছে সাথে!

হ্যাঁ, তুই বোধহয় সেদিন ওই interview-টা শোনালি না? ‘নিজের মুখে নিজের কথা’? সেটা তুই তো গান খুঁজতে গিয়েই পেয়েছিলি?

হ্যাঁ, হ্যাঁ, ওই interview ব্যাপারটা একদমই আলাদা ছিল। সত্যি বলতে কি, ওইরকম একটা interview-তে, একটা লোক গান নিয়ে ওইরকম ভাবতে পারে বা art-কে ওইভাবে appreciate করা যেতে পারে এটাই আমার কাছে ভীষণ নতুন ছিল। কারণ ওখানে দুটো জিনিসের কথা বলছে। তুই মনে করে দেখ। এক জায়গায় বলছে emotion আর intellect-এর কথা। মানুষের। এবার intellect-টাকে তুই একটু ঘষে মেজে একটু ভালো exposure দিয়ে better করতে পারিস। কিন্তু emotion-টা তো খুব original জিনিস। ওটা তো তুই বদলাতে পারবি না। আর আলাদা আলাদা মানুষের emotion আলাদা আলাদা রকমের হয়। এবার ওই আলাদা আলাদা emotion দিয়ে আলাদা আলাদা মানুষ যখন একই জিনিস consume করে, তখন তাদের reaction-টাও আলাদা হবে।

তার ওপরে সেই গান আর cricket! এই দুটো এত আলাদা জিনিস কিন্তু দেবব্রত বিশ্বাস এসে মিলিয়ে দিচ্ছে। সেখানে বলছে যে — আমি হলাম bowler। আমার শ্রোতা হল batsman। আর শ্রোতার পেছনের stump-গুলো হচ্ছে ওই, তুই যেটা বললি, intellect আর emotion। এবার আমি নাগাড়ে ছুটে এসে ball করছি — bumper, bouncer। মানে সব রকম চেষ্টা করছি শুধু clean bowled করে দেওয়ার। মানে গান গেয়ে শ্রোতাদের intellect আর emotion ছিটকে দিতে হবে। এবার naturally cricket-এর নিয়মে আমরা জানি, সব batsman তো একই রকম ball-এ out হয়না। আবার কিছু কিছু batsman not out-ও থাকে কিছু innings-এ। সেখানে আবার ফিরে গিয়ে দেবব্রত বিশ্বাস বলছে, তাহলে বুঝলে তো, গান গেয়ে ওই কারণেই সবাইকে একই ভাবে খুশি করাটাও impossible!

কিন্তু এই যে তুই cricket খেলার কথা বলছিস না? এবার এখানে যদি এরকম নিয়ম করে যে তোকে ball করতে দেওয়াই হবে না। কেন বলছি। এখন তো আমরা জানি রবীন্দ্রনাথের গানের কোনো copyright নেই। কিন্তু একটা সময় অবধি তো ছিল। এবং নিয়মটা কী রকম ছিল? ধর তুই রবীন্দ্রনাথের একটা গান record করতে চাস। তোকে প্রথমে যে গানটা তুই record করতে চাইছিস, সেই গানটা আদেও record করতে পারবি কি পারবি না, সেটা বিশ্বভারতী music board-এর কাছ থেকে একটা permission নিয়ে আসতে হবে। ঠিক আছে? ধর তোকে permission দিল। এবার তুই গানটা record করলি। এবার record করা গানটাকে finally music board-এর কাছ থেকে approved করিয়ে আনলে, তবে তোর গান release করবে। এটা ছিল নিয়ম। এবার দেবব্রত বিশ্বাস তার অনেক আগে থেকে রবীন্দ্রনাথের গান গাইছে এবং ওর কিছু record-ও বেরিয়ে গেছে already। কিন্তু একটা সময়ের পর থেকে, music board-এর তরফ থেকে নানান রকম আপত্তি আসতে থাকে। এবং আপত্তিগুলো কী রকম ছিল? এক জায়গায় বলছে, গানের না music-টা ঠিক মানাচ্ছে না। আবার এক জায়গায় বলছে, notation-টা ঠিক হয়নি। আবার এক জায়গায় বলছে, একটু melodramatic হয়ে গেছে। এইসব যখন বলছে তখন কিন্তু প্রথমে দেবব্রত বিশ্বাস নিজে একদম specific কিছু point-এ জানতে চেয়েছে। কোথায় সমস্যা? কী problem? কোন জায়গাটায় সমস্যা বল। তখন যেটা হয়েছে, চিঠি দিয়েছে, চিঠির উত্তর এসেছে। তাতে ultimately কিছু গান approved-ও হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এই যে সমস্যা আসার ব্যাপারটা বলছিলাম, এটা কিন্তু আসতেই থাকে।

ব্যপারটা অদ্ভুত! কারণ একই সময়ে, বাকি শিল্পীদের গান কিন্তু pass হয়ে যাচ্ছে!

হ্যাঁ, একদম! ওটাই বলছি! তুই সমস্যাটা বুঝতে পারছিস? এরকম একটা জায়গা থেকে দেবব্রত বিশ্বাস ঠিক করছে যে, না! আর রবীন্দ্রনাথের গান record করব না!

হ্যাঁ, record নাই বা হল, গান গাওয়া তো আর বন্ধ হচ্ছে না।

Record করা তো প্রথমেই বন্ধ করেনি। একটা সময়ে music board-এর তরফ থেকে একটা list এলো। কিসের list? কিছু instrument-এর list। বলছে যে ওই list-এ যে যে instrument mention করা আছে, তুমি রবীন্দ্রনাথের গান record করতে চাইলে, তোমাকে সেই instruments-গুলোই ব্যবহার করতে হবে। ওর বাইরে কিছু করতে পারবে না। যদি কর, তাহলে দু’রকমের সমস্যা হতে পারে। প্রথম সমস্যা, গানের sentiment নষ্ট হতে পারে। আর দ্বিতীয় যে সমস্যাটা, সেটা বলছে… আরো ভয়ঙ্কর! বলছে যদি কোনো ভাবে, western instrument তুমি use কর, তাহলে গানের সর্বনাশ হবে!

আচ্ছা একটা Scottish গান। সেই গানটা রবীন্দ্রনাথ শুনল। তার খুব ভালো লাগল। সেটা বাংলায় বানালো, গানটাকে। এবার Scottish গানের যে composition, সেটা তো কেও একটা ওই western instrument বাজিয়ে বানিয়েছে? এবার, রবীন্দ্রনাথের বাংলা গানটাকে যখন আমি record করতে যাব, তখন যদি সেই original composition-টা original instrument-টা দিয়েই আমি record করতে যায়, আমাকে কিন্তু আটকে দেবে!

এইরকম হয় না ভাই! তুই কী বলছিস, বল? বলছিস eastern-western মেশানো যাবে না। এরকম হয়? আমি সেদিন একটা ইংরেজি গান শুনছি, দেখছি গানের মাঝখানে কোথা থেকে হঠাৎ করে harmonium বাজছে! আমার শুনে দিব্যি লাগল!

ফিলিপ গ্লাস আর রবিশঙ্কর-এর album-টা! সেখানে গোটা album জুড়ে যেটা হচ্ছে আর specially শেষ গানটায় এসে! সেখানে রবিশঙ্কর গাইছে আর তার ঠিক পরে কেও একটা violin নিয়ে ঢুকে পড়ছে! তারপর ধর ওই ‘চারুলতা’-র music। সেটা নিয়ে সত্যজিৎ রায় বলছে যে, হ্যাঁ, গানটা Scottish গান। সেটা রবীন্দ্রনাথ বাংলায় বানিয়েছে ঠিকই। কিন্তু আমি যখন cinema-য় use করছি গানটা, সেটা আমি western instrument বাজিয়েই করছি। এবার এখানে প্রশ্নটা ভীষণ important যে, কেন করছি? সেটা হচ্ছে, আমার দরকার মনে হয়েছে, তাই আমি করছি!

দেখ, এটা বোঝা যায় যে এই circular-গুলোর কোনো যুক্তি নেই। মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কারুর একটা গান গাওয়া আটকাতে হবে। এবার সেটা যদি instrument list দিয়ে করা যায়, হল। নাহলে কী বলব? বলব গানের ভাব মিলছে না, হবে না!

ভাব মিলল কি মিলল না, সেটা তো সেই সময়ে board-এর মাথায় যারা আছে তাদের ভাবের ওপর না? এবার তাদের ভাবটাই যে রবীন্দ্রনাথের ভাব বা original ভাব, সেরকম তো জানার কোনো সুযোগই নেই আমাদের।

সেটাই তো বলছি!

আচ্ছা ধর একটা গান, ‘সখী ভাবনা কাহারে বলে’। এটা তো ছোটবেলা থেকে এতবার শুনে এসেছি একই ভাবে, এবার একটা ধারণা তৈরি হয়েছে না? যে গানটা ভীষণ দুঃখের। দরদের গান। যে গান শুনছে, গাইছে, দুজনেই কেঁদে ফেলছে। ভীষণ প্রেমে ব্যথা পেয়েছে, এই সব! কিন্তু যখন আমি প্রথমবার দেবব্রত বিশ্বাসের গলায় এই গানটা শুনলাম, তখন কিন্তু মনে হয়েছে, boss ভুল হয়ে যাচ্ছে কোথাও! তারপর আবার মন দিয়ে যখন কথাগুলো শুনছি, তখন দেখলাম ব্যাপারটা পুরোটাই উল্টো। মানে যে গান গাইছে, সে তো ব্যথা পায়ইনি। তার বন্ধু ব্যথা পেয়েছে এবং তার কাছে এসে সেটা নিয়েই কাঁদুনি গেয়ে যাচ্ছে। এবার সে বলছে, দিনরাত তোরা শুধু ঘ্যান ঘ্যান করে যাচ্ছিস প্রেম প্রেম করে। এই ঘ্যান ঘ্যান করার জন্যই কি লোকজন এই ‘প্রেম পাচ্ছি না, প্রেম পাচ্ছি না’ বলে এত ছুটছে? তার থেকে তুই দেখ চারপাশে এত কিছু আছে! চাঁদ আছে। ফুল আছে। পাখি আছে। এত কিছু আছে! যদি তাও দেখতে না পারিস, আমার কাছে আয়। তোকে দারুন দারুন গান শোনাব, মন ভালো করে দেব। এমন রস দেব, মজিয়ে দেব!

এটা ভীষণ normal ব্যাপার। তুই যেটা বলছিস। তোর কাছে একটা মনে হয়েছে, তোর কাছে এটা ঠিক। এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু problem-টা হচ্ছে music board! এই যে বিশ্বভারতী music board এটা কিছুতেই মানতে রাজি নয়। ওদের মাথায় আছে যে একটা correct version বলে কিছু একটা হয়। এবং এখনও website-এ লিখে রেখেছে সেই কথাটা।

বাইরের লোকেদেরও কিন্ত এই বিশ্বভারতীর ওপর একটা expectation আছে যে সঠিক রবীন্দ্র চর্চাটা ওইখানেই হবে!

দেবব্রত বিশ্বাস এক জায়গায় বলছে যে যারা এই আটকাচ্ছিল ওর গান, তারা কিন্তু কেউই রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকা কালীন রবীন্দ্রনাথের গানের চর্চাটা কী রকম হত সেটা দেখেনি। দেবব্রত বিশ্বাস সেই জায়গায় একবার হলেও রবীন্দ্রনাথকে তার নিজের গান শোনাতে পেরেছিল। মানে ব্যপারটা কী রকম হয়েছে বল তো? ওই আর কি, ঠাকুর চলে গেছে কিন্তু প্রসাদটা রয়ে গেছে। ওই প্রসাদটাকে নিয়ে এবার যত টানাটানি, খামচা খামচি!

আমার! আমার!

এই তুমি কেন এঁটো করলে?

অমর্ত্য সেনের একটা লেখাতে পড়ছিলাম, এই যে রবীন্দ্রনাথ একজন অতিমানব, একজন ঠাকুর, এই যে একটা image, এটা কিন্তু পশ্চিমের দেশে ছিল। বেশ কিছু বছর ধরে ছিল। কিন্তু তারা যখন রবীন্দ্রনাথেরই পরের দিকের লেখাগুলো দেখে, তার কথা শোনে, তখন তাদের সেই image-টা ভেঙে যায়। এবার সেখানে আমার মনে হচ্ছে যে আমরা এখনও আমাদের… এ দেশের মানুষ আমরা, আমরা এখনও কিন্তু রবীন্দ্রনাথকে… সেই তার ওই অতিমানব image-টা ধরেই আমরা বসে আছি। ভাবে ভাবেই বিভোর হয়ে যাচ্ছি। তার যে এতগুলো rationality-র দিক আছে, সেগুলো তো আমরা আগেই reject করে দিয়েছি, তার গান নিয়েও যে কোন rationality থাকতে পারে সেটা আমরা শুনবই না।

হ্যাঁ, শুধু রবীন্দ্রনাথ তো নয়। রবীন্দ্রনাথ এবং তার সমসাময়িক মানুষজন রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে কী ধরণের experiment করেছে, সেটাও তো একটা আলোচনা করার বিষয়।

একটা জায়গায় শুনছিলাম যে “তবু মনে রেখো”, এই গানটা ঠাকুরবাড়ির তিনজন তিন ভাবে গেয়ে record করেছিল। এবার রবীন্দ্রনাথ নিজে গেয়ে যেভাবে গানটা record করেছিল, সেটার সাথে এখনও বাজারে যে version-টা চালু আছে, এই দুটো কিন্তু অনেকটা আলাদা। এবার এরকম একটা board যদি এসে যায়, দিয়ে বলে, এই যে বাজারে যে version-টা চালু আছে এটাই correct version, তাহলে তো ভয়ঙ্কর!

তখন রবীন্দ্রনাথ নিজেই অ-রাবীন্দ্রিক হয়ে যাবে!

আরে রবীন্দ্রসঙ্গীত জিনিসটাই তো cover! এবার ক’টা লোক এসে যদি বলে, আমরা এই পঞ্চাশটা গান আছে… এই পঞ্চাশটা আমরা সবাই মিলে একই ভাবে গাইব? গাস না বাবা, ছেড়ে দে!

যে লোকটা নিজেই নিজের গানকে নানান রকম সময়ে নানান notation-এ শিখিয়েছে। এবং আমি এটাও পড়েছি যে ইন্দিরা দেবী তার বাড়িতে যখন রবীন্দ্রনাথের গান গাইত বা শেখাত, তখন কিন্তু সে harmony দিয়ে নানান রকমের experiment করত। মানে ওরকম কোন ধরা-বাঁধা নিয়ম নেই। এবার সত্যজিৎ রায় এক জায়গায় বলছে যে জর্জদার গান যখন শুনতাম, তখন কিন্তু কখনও এটা ভাবতে হত না যে সেটা notation মেনে হচ্ছে কি হচ্ছে না। কেন? না গানের মানেটা, ভাবটা, যথাযত থাকত। তার সাথে এটাও বলছে যে সত্যজিৎ রায় তার ছেলেবেলায় কিছু কিছু শিল্পীর কাছ থেকে কিন্তু ওইরকম রবীন্দ্রনাথের গান শুনতে পেত। পরবর্তী কালে কিন্তু কেবল মাত্র দেবব্রত বিশ্বাসের কাছে ওরকম গান শুনতে পাওয়া যেত।

এই যে notation মিলছে, মিলছে না, সেটা নিয়ে এত কান্ড হচ্ছে, আমি কিন্তু এটাও জানতে পেরেছি যে সেই সময় আর বেশ কিছু বছর অবধিও কোন notation-এর official বই-ই ছিল না। থাকার মধ্যে কী ছিল? কটা magazine ছিল। সেখানে কিছু কিছু গানের randomly কিছু notation বেরোত। সেটা নিয়ে এত কিছু!

Notation নিয়ে এমন ঘটনাও আছে যে রবীন্দ্রনাথের গানে একটা শব্দ ছিল “চঞ্চল”। এবার সেই “চঞ্চল” শব্দটার “চন্” যে syllable-টা, সেটা গানে যেরকম notation-এ গাওয়ার কথা, সেরকম হয়নি বলে, একজন music board-এর তরফ থেকে সোজা দেবব্রত বিশ্বাসের বাড়িতে চলে এসেছে অভিযোগ জানাতে! ঠিক আছে? এবার সেই গান তাও record হয়েছে। কিন্তু তুই যে বলেছিলি যে notation সব গানের ছিল না, তাই যে গানের notation নেই, সেই গান তুই record-ই করতে পারবি না। এরকম নিয়মও ছিল একটা সময় অবধি।

এইরকম ঘটনা আগেও হয়েছে। একবার Paris-এর একটা exhibition-এ একটা আঁকা শুধু এই কারণে reject হয়ে যায় যে যারা selector, তাদের ধারণা যে আঁকার মধ্যে যদি কোন nude figure থাকে, তাকে যথাযত সম্মান দিতে হবে। মানে তাকে রাজকীয় ভাবে বসিয়ে রাখতে হবে, শুইয়ে রাখতে হবে, সে ঢুলু ঢুলু চোখ করে এদিক ওদিক তাকাবে, সেই অবধি ঠিক আছে। কিন্তু তাকে দিয়ে কখনই শারীরিক কোন কসরত করানো যাবে না। এবার দুষ্যাম্প কী করেছে? তার আঁকাতে একজন সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছে। যেই সেটা দেখেছে তারা আটকে দিয়েছে। আবার এই ঘটনার প্রায় পঞ্চাশ-ষাট বছর আগে, এই Paris-এই অন্য একটা exhibition-এ, Paris Salon-এ, মানুষের এরকম ধারণা ছিল যে সেই আঁকাগুলোকেই নেওয়া হয় যেগুলো নাকি রেনেসাঁর style-কে হুবহু follow করছে। আর এখানে নাকি কিছু technique আছে, কিছু theme আছে, সেগুলো মেনে আঁকলেই নাকি ছবি নিয়ে নেয়। এবার ম্যানে অলিম্পিয়ার মত একটা ছবি আঁকল যেটা তাদের সেই সব convention কোনটাই follow করে না। কিন্তু যারা selector, তারা কি সেটাকে আটকাল? সেই বছর কিন্তু Paris Salon-এ এই আঁকাটাই গিয়েছিল!

বুঝলাম। কিন্তু তুমি এরকম নিয়ম রাখবেই বা কেন? সমস্ত জিনিস তোমার ভালো লাগবে, তোমারই রুচি-সম্মত হবে, এই কথাটা কে বলেছে? “প্রাণ ভরিয়ে, তৃষা হরিয়ে” গানটা আমি দেবব্রত বিশ্বাসের যে album version-টা শুনছি, সেটা শুনে মনে হচ্ছে ওই গানে যে music-টা রয়েছে, মানে গানের শুরুতে বল বা গানের মধ্যে, আমার মনে হচ্ছে ওই music-টা কোনো ভাবেই গানটার সাথে যেতে পারে না। আমার ভালো লাগছে না। কিন্তু ওই একই গান যখন দেবব্রত বিশ্বাস দূরদর্শনের জন্যই live গাইছে, সেটা যখন শুনছি তখন আবার মনে হচ্ছে, একদম ঠিক!

“তুমি রবে নীরবে” গানটা নিয়েও আমার একই রকম experience। মানে ওর গলাতেই আমি তিন-চার রকম শুনেছি। এবার একটা version আমার এতটাই ভালো লাগে যে বাকি version-গুলো শুনতেই ইচ্ছে করে না।

সত্যিই তাই। মানে গানের ক্ষেত্রে বল বা ছবি আঁকার ক্ষেত্রেই, খারাপ-ভালো এগুলো নিয়ে তুই কথা বলতে পারিস। কিন্তু রবীন্দ্রসঙ্গীত, তার রাবীন্দ্রিক ভাব, এই জিনিসটা কিন্তু একটা জাতির identity। বাঙালির এতদিনের যা মান-সম্মান, সমস্তটা depend করছে রবীন্দ্রনাথের লেখা গানের ওপর। এবার সেটা নিয়েও তুই ইয়ার্কি করবি!

হ্যাঁ, তুমি নিজের মত গান বানিয়ে যা খুশি কর সেখানে। সব বিষয়ে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে কেন টানাটানি করতে হবে?

একদম! এটাই বলছি। এবার সেখানে দেবব্রত বিশ্বাস তার ছোটবেলার গল্পগুলো যেখানে লিখছে, সেটা যখন পড়ছি, তখন দেখছি কিন্তু ব্যপাররটা অন্য রকম ছিল। দেবব্রত বিশ্বাস বলছে, তার ছেলেবেলায় ব্রাহ্ম বাড়িতে রবীন্দ্রনাথের গানের চর্চা হত কিন্তু ওরই পাড়ার যে হিন্দু পরিবারগুলো ছিল, সেখানে কিন্তু রবীন্দ্রনাথের গান গাইলে, তাই নিয়ে নিন্দে হত! মানে বলতে চাইছে, কিছু high-society আর ব্রাহ্ম বাড়ি, এর মধ্যে রবীন্দ্রনাথের গানের চর্চাটা সীমাবদ্ধ ছিল। পরে ছবিতে পঙ্কজ মল্লিক যখন রবীন্দ্রনাথের গান ব্যবহার করছে, তখন কিছুটা popularity gain করছে। কিন্তু এই যে রবীন্দ্রনাথ, “গানের কথা লিখছে, সুর করছে, নিজের মত করে করছে, নতুন কিছু করছে, শ্রোতাদের কাছে এমনিই পৌঁছবে। সে পৌঁছতে কিন্তু পারছে না। তার ছবির মাধ্যম দরকার পড়ছে।”

আরেকটা জিনিসও আছে। যে বছর রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবার্ষিকী ছিল, সেই বছর থেকেই রাজ্য জুড়ে বেশ কিছু অনুষ্ঠান হয় যার জন্যও কিন্তু রবীন্দ্রসঙ্গীতের popularity অনেকটাই বেড়ে যায়। এইবার এই যে পুরো ঘটনাটা, মানে ধর, পঙ্কজ মল্লিকের cinema-য় use করা থেকে এই জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানগুলোতে, এই পুরো transition-টা কিন্তু একজন দেখছে। দেবব্রত বিশ্বাস দেখছে। আবার সে নিজেও একজন ব্রাহ্ম হয়ে সে দেখছে, ছোটোবেলায় আমি যে গানগুলোকে ব্রাহ্মসঙ্গীত হিসেবে চিনতাম, সেই গানগুলোই এত বছর পর, এরা দাগিয়ে দিচ্ছে রবীন্দ্রসঙ্গীত বলে। এবার এই পুরো transformation যে মানুষটা দেখেছে, তাকেই কিন্তু music board এসে বলছে শেষের দিকে যে, যদি আপনি কোনোদিন মনে করেন যে আপনি একটা ব্রাহ্মসঙ্গীতের album বের করবেন, সেখানে কিন্তু আপনাকে খুব সতর্ক থাকতে হবে। যেন ব্রাহ্মসঙ্গীতের ঠিকঠাক পরিবেশ, সেটা যেন maintain করা হয়। মানে এতটা!

সেই! এই দারুন দারুন জিনিসগুলো যখন ঘটছে, এর মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে দেবব্রত বিশ্বাস। তাই শেষে গিয়ে বলছে, দেখুন আমার রবীন্দ্রনাথের গান গাওয়া নিয়ে যা যা সমস্যা, সেগুলো আমি record করে রেখে গেলাম। আমি মারা যাওয়ার পর লোকজনকে শোনাবেন। এই কথাটা যখন আমি শুনছি, তখন আমার মনে হচ্ছে, দেখ এটা কিন্তু নিজেকে justify করার জায়গা থেকে হতে পারে না। রবীন্দ্রনাথের গানের copyright উঠে গেছে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে যে শুচিবায়ুগ্রস্ততা, যে মানসিকতা, সেটা এখনও দিব্যি রয়েছে!

তা তো আছেই! এবার তার সাথে একটা confusion-ও আছে। ধর, আমি-তুই, আমরা ছোটবেলা থেকে কম করে কুড়িটা রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনেছি? এবার সেটা কি শুধু এই কারণেই যে আমাদের taste ভীষণ উঁচু নাকি আমার তো মনে হয় বাঙালি বলে আমরা এমনিই শুনেছি ওগুলো।

এটা চন্দ্রিলও একটা interview-তে বলছিল যে ব্যপারটা অনেকটা ওরকম stimulus-response-এর মত হয়ে গেছে।

হ্যাঁ, রক্তদান শিবির হলে, মেলা হলে, পুজো হলে, এখন বিয়েতে পর্যন্ত…

হ্যাঁ হ্যাঁ, ওই বিয়েবাড়িটার কথাই তো… তুই গিয়েছিলি আমার সাথে। বর্ধমানে। এবার এখন বিয়ে হলে দেখ একটু box বাজিয়ে নাচ গান হয়। অল্পবয়সী ছেলেমেয়েরা একটু excited থাকে, আশা করে থাকে…

আশা করে থাকলেই তো হবে না। পরিস্থিতি যদি ওরকম হয়! পাত্রীপক্ষের যে প্রধান অতিথি, তিনি একজন স্কুলের head মাস্টারমশাই। এবার head মাস্টারমশাই যতক্ষণ বিয়েবাড়িতে থাকবেন ততক্ষণ serious গান বাজাতে হবে। “Serious গান” মানে কী? রবীন্দ্রসঙ্গীত! এবার বাচ্চাগুলো তো ছটফট করে মরে যাচ্ছে। সেই রাত দশটা অবধি রবীন্দ্রসঙ্গীতই বেজে গেল। তারপর মাস্টারমশাই খেয়ে দেয়ে যখন বাড়ি গেলেন, তখন বাচ্চাগুলো নিজের পছন্দ মত গান বাজিয়ে নাচানাচি করল, মজা করল।

একটা সময় অবধি তো আমাদের শহরেও… মানে traffic signal-এ রবীন্দ্রনাথের গান বেজে যেত। Vote-এ জিতলে রবীন্দ্রনাথের গান বাজাতে হয়।

আমি তো এরকমও পড়লাম যে কিছুদন পর থেকে নাকি জঞ্জালের গাড়িতেও রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজবে! এটা হাওড়ার খবর! ছাব্বিশে জানুয়ারি বল, পনেরোই আগস্ট বল, এই দিনগুলোতে loudspeaker-এ সকাল থেকেই ওই দেশাত্মবোধক গান শুরু হবে। কিন্তু ওই বিকেল হতে হতে রবীন্দ্রসঙ্গীত প্রেম পর্যায়ের শুরু হয়ে যায়।

এই যে রবীন্দ্রনাথের গানের আগে বা পরে শোনানোর মত কোনো গান হয়নি, হবে না, এটা এক ধরণের নোংরামো। কারণ তুমি public অনুষ্ঠান হলেই রবীন্দ্রনাথের গান বাজাবেই, এটা তো একটা dignified হওয়ার ভড়ং থেকে করছ!

সে যে কারণেই হোক, একটা জিনিস যদি এত over-expose করা হয়, তাহলে একটা বিরক্তি আসবে না? আবার রবীন্দ্রসঙ্গীত!

এরকম শুনতে শুনতে একটা জায়গায় যখন দেবব্রত বিশ্বাসের interpretation শুনি, তখন মনে হয় জিনিসটা অন্য কিছু, অন্য রকম।

একবার “তাসের দেশ” নাটকে দেবব্রত বিশ্বাস গান গাইতে গেছে। “বাঁধ ভেঙে দাও” এই গানটা। এবার গানটা গাওয়ার আগে director-কে গিয়ে জিজ্ঞেস করেছে যে, দাদা এই গানটা কি আমি with pleasure গাইব না without pleasure গাইব? এবার কোন director বলবে pleasure ছাড়া গাইতে? সে বলেছে, pleasure দিয়েই গাও। এবার এত pleasure দিয়ে গেয়েছে যে নাচের যারা দল ছিল, তারাই

। এবার pleasure বলতে মনে হয় IPTA-তে যেভাবে গান করত সেইভাবে…

হ্যাঁ, তুই কি বলছিস বুঝেছি। লোকটা তো শুধু IPTA-র জন্য গান করেনি। দুর্ভিক্ষের জন্য গান করেছে, মুক্তিযুদ্ধের জন্য গান করেছে…

হ্যাঁ, সেই সময়ের পরিস্থিতিগুলো একটু অন্য রকম ছিল। উৎপল দত্ত শুধু লেখার জন্যই সাত-আট মাস jail খেটেছে।

Calcutta 71 ছবিটা যখন তৈরি হচ্ছে, director-ই বলছে যে ওই ছবিটা দেখতে যাওয়া তখন একটা প্রতিবাদ মিছিলে যাওয়ার মত। এবার এখন তো ওরকম ছবি তৈরি হচ্ছে না। এবং তৈরি হলে আমার মনে হয় release হবে না। তারপর তুই মিছিলে যাবি না meeting-এ যাবি তোর ব্যপার।

শুধু সরকারও নয়। একটা গোটা society-র এখন এরকম একটা দাবি হয়েছে যে, একজন শিল্পী মানুষ, তার political stand থাকবে কেন!

এবার এইখানেই দেবব্রত বিশ্বাস অন্য রকম কথাও বলছে। বলছে যে, ভাই তুমি গান গেয়ে মানুষের মানসিকতা কিছু বদলাতে পারবে না। এবং আমারও মনে হয়েছে যে গানের যে মানসিকতা, গান নিয়ে যে মানসিকতা, সেটা কোথায় বদলাল?

সে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সমস্যা নিয়ে ক’টা গান বানাল। সেটা recording company-কে দিল। কিন্তু তারা বহু বছর অবধি সেই গানগুলোকে release করল না। সেগুলো তো রবীন্দ্রসঙ্গীত নয় যে music board এসে অসুবিধে করবে। কিন্তু তাও করল না। এবার এখন গানগুলোকে খুঁজলে পাওয়া যায়। তার মানে পরে কোনো একটা সময়ে গিয়ে…

Release করেছে। কিন্তু তুই যে পরিস্থিতির কথা বলছিস, সেই সময় তো এরকম কাজ হচ্ছে কিন্তু একই সময়ে, অন্য দিকে, অরুণেন্দু দাস বলে একজন বাংলায় কিছু গান বানাচ্ছে। পরে গিয়ে জানতে পারছি ওগুলো সমসাময়িক কিছু ইংরেজি গানেরই interpretation। Mainly টম প্যাক্সটনের গানের সুর, কথার এসব রেশ আছে কিন্তু যে গানগুলো তৈরি হচ্ছে, সেগুলো কিন্তু নতুন গান একদম।

“সোনার হরিণ চাই” গানটাও সেরকম। সেই জায়গায় যখন আসছে যে, “সে যে চমকে বেড়ায়”, ওই জায়গাটা দেবব্রত বিশ্বাস যেভাবে গাইছে, এতটা original expression, যে মনে হচ্ছে ওর নিজেরই গান!

জয়জিৎ লাহিড়ী একটা গান লিখল। এবার সেই গানটাকে স্বায়ত্ত আর উপল, দুজন আলাদা করে compose করল। এবার এই একই কথার দুটো গান যখন তৈরি হল, দুটো গানের কিন্তু মানেটা একেবারে আলাদা লাগছে।

হ্যাঁ। Suzanne গানটার আমি বাংলাতেই চার রকমের interpretation শুনেছি। অনেক বছর অবধি “সে জন” গানটাই মনে হত যে খুব কাছাকাছি একটা interpretation কিন্তু তারপর যখন “ডাকবাক্সের গান” শুনলাম, তখন মনে হল, না এটাই!

দেবব্রত বিশ্বাস একটা গল্প বলছে। একজন বিদেশি composer কয়েকজনকে একটা composition শোনাচ্ছে। শুনিয়েছে। তারপর বেশির ভাগ লোকজনই নানান রকমের প্রশংসা করছে যে দারুন, super, fantastic — এসব বলছে। কিন্তু একজন দেখা যাচ্ছে চুপ করে আছে, কিছু বলেনি। আবার সে নাকি নিজেই একজন composer। এবার তাকে বাকিরা প্রশ্ন করেছে যে বলুন আপনার কী রকম লাগল? তখন সে বলছে যে এটা শুনে আমার মনে হল যেন আমি একটা মরুভূমিতে আছি। সেই মরুভূমিতে ঝড় উঠেছে খুব। সেই ঝড়ে একেবারে বালি-টালি উড়ছে সাংঘাতিক। তারপর আস্তে আস্তে সে ঝড় কমল। তারপর চাঁদের আলো ফুটল ভয়ঙ্কর। সেই চাঁদের আলোতে চারিদিক ধুয়ে যাচ্ছে। এবার এটা শুনেই, যে composer, তার দারুন লেগেছে। সে বলছে, exactly! আমি তো এটাই বানাতে চেয়েছি। আমার composition-টার নামই “Caravan”! মানে সেটাই। যে শুনছে তার তো একটা interpretation থাকবে। এবার সেটা এখানে মিলে গেছে। সব সময় নাই মিলতে পারে।

হ্যাঁ, একটা গান আলাদা আলাদা সময়ে মানুষ যখন শুনছে, তাদের যে মনে-হওয়া-গুলো, সেগুলো যদি এক জায়গায় জড় করা যায়? Genius.com বলে একটা জায়গা আছে যেখানে আজকের দিনে হয়ত বব ডিলানের গান নিয়ে এরকম হচ্ছে। কালকে সেটা রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে হতেই পারে!

হ্যাঁ, সেটা তখনই হবে যখন রবীন্দ্রনাথের গানের কথা নিয়ে কথা হবে। তুই একটা বাচ্চাছেলেকে পৈতে দিয়েছিস। এবার তাকে বলেছিস প্রতিদিন গায়ত্রী মন্ত্র জপ করতে হবে। সে তো করছে কিন্তু তার মানে জেনে কি করছে? এবার রবীন্দ্রনাথের গানটা নিয়ে exactly তাই হচ্ছে! কেন না, সুমন একটা interview-তে বলছে যে “এলেম নতুন দেশে”, এই গানটা কিউ এত খারাপ ভাবে গেয়েছে যে ওকে চর মারা উচিত। বলছে, বাঙালিরা এতটাই উদার তাই এগুলো allow করে।

সে তো নিজেই popular English গানগুলোর থেকে সুর নিয়ে নিজের মত করে গান বানিয়ে সেটা নিয়ে album-ও বের করেছে। এবার আমি legality-র দিকটা ছেড়ে দিলাম। শুধু art-এর দিক থেকেও সেটা যে ভীষণ রুচি-সম্মত হয়েছে, সেটা কি ওকে কেও বলে দিয়েছে?

না। না। না। আসলে আমাদের একটা ভুল হচ্ছে। রবীন্দ্রনাথ কিন্তু art-এর ওপরে। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে তুমি যা ইচ্ছে করতে কিছুতেই পার না। কেন না, কিউ শুধু “তাসের দেশ”-এর গানগুলোকে interpret করবে বলে “তাসের দেশ” cinema-টা বানিয়ে ফেলল। ভালো কথা। কিন্তু সুমন যখন রবীন্দ্রনাথের গানের album বার করছিল, তখন কিন্তু কিউয়ের আবার অসুবিধে হচ্ছিল।

Interpretation করে কিন্তু কিছু কিছু গান মাঝে মাঝে original-এর থেকেও better হয়ে যায়। যেমন একটা গানের গল্প জানি। সেটা যখন record করা হয়, সেই recording company গানটাকে release-ই করতে চায়নি। তারপর একটা ছোট company থেকে যখন ultimately গানটা release হয়, তার পরের দশ-পনেরো বছর কেও গানটা গায়নি, সেটা নিয়ে চর্চাও হয়নি। শুধু বব ডিলান মাঝে মাঝে তার live show-তে এই গানটা গাইত। কিন্তু অনেকদিন পর যখন জেফ বাকলি গানটা cover করল, তখন এটা নিয়ে হই চই পড়ে গেল। এখন এরকম অবস্থায় দাঁড়িয়েছে, যে কোহেনের আর কোনো গান শোনেনি সে কিন্তু at least “Hallelujah”-টা শুনেছে।

এরকমটাই হয়। রবীন্দ্রনাথের গান যে ভালো লাগছে, বুঝতে পারছি, দেবব্রত বিশ্বাসের গান না শুনলে… হত না।

এই episode বিষয়ক আরও কিছু জানা আছে কি? আমাদের mail করে পাঠাও!

📧 mail@triangularvishon.com

--

--

Triangular Vishon
0 Followers

A podcast in Bengali on things we love and ideas we care about. www.triangularvishon.com